ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ ভাদ্র ১৪৩২, ২৬ আগস্ট ২০২৫, ০২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

সারাদেশ

হারানো রূপে ফিরছে ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর, ফিরছেন পর্যটকরা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮:১৩, আগস্ট ২৬, ২০২৫
হারানো রূপে ফিরছে ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর, ফিরছেন পর্যটকরা পর্যটনকেন্দ্র সাদা পাথর আবারও যেন চিরচেনা রূপে ফিরল।

উজানে ভারত থেকে আসা জলধারা সীমান্তে পেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশে। দুইপাশে প্রকৃতির সবুজ সমারোহ যেন আকাশ ছুঁয়েছে।

উঁচু পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝরনার জল ও স্বচ্ছ পানির স্রোতে প্রচুর বোল্ডার পাথর ভেসে আসে, সেই ঝরনার স্রোতধারা নেমেছে সাদাপাথর এলাকা ভোলাগঞ্জ নোম্যান্সল্যান্ড বা জিরোপয়েন্ট। এই পুরো এলাকাজুড়ে একটি মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি করেছে। পাথর মাড়িয়ে নেমে আসা স্বচ্ছ জলে সময় কাটাচ্ছেন পর্যটকরা।  

নোম্যান্সল্যান্ড তথা জিরোপয়েন্ট থেকে জলধারা বিভক্ত হয়ে গেছে দুই দিকে। এর একপাশে হয়েছে নজিরবিহীন লুটপাট। এলাকাটি এখনো মরুপ্রান্তর। সেই লুটকৃত স্থানে স্থাপনের জন্য পাথর ফেলা হচ্ছে।

জলধারার আরেকটি প্রান্তে পাথর রয়েছে। তবে সেখান থেকেও বেশকিছু পাথর চুরি হয়েছে দাবি করছেন পর্যটকরা। অবশ্য যে স্থানে পাথররাজি রয়েছে, সেখানে আরো কিছু পাথর ফেলেছে প্রশাসন। সেই স্থানটিতে আসতে শুরু করেছেন পর্যটকরা। আগে যে পরিমাণ পর্যটক আসতেন, সে তুলনায় অনেক কম বলছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। সাদা পাথর দেখতে এখন পর্যটক আসছেন।

স্থানীয় এলসি ব্যবসায়ী নোমান আহমদ বলেন, সাদা পাথর প্রাকৃতিকভাবে যেভাবে স্থাপিত ছিল, সেটা হয়তো ফিরে আসবে না, তবে প্রশাসন যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে সাদা পাথরের নান্দকিতা ফিরে আসবে। প্রশাসন যথেষ্ট চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, প্রথমে পর্যটকরা কিছুটা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। কিছুটা বিঘ্ন ঘটেছিল। অবশ্য অন্যপাশ, সেখানে মেইন স্পট, সেখান পাথর রয়েছে। সেখানে পর্যটক আসা অব্যাহত রয়েছে। গণমাধ্যমের কল্যাণেই সেটি হয়েছে।

স্থানীয় সাংবাদিক সাবিবর আহমদ বলেন, সাদা পাথরে এখন অনেক পর্যটক আসছেন। আশা করবো সাদা পাথর তার পরিপূর্ণ রূপ ফিরে পাবে। সবাই যেন দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে শ্রদ্ধাশীল হন। এই প্রকৃতি কন্যার রূপ অক্ষুণ্ন রাখতে যার যার অবস্থান থেকে  চেষ্টা করি।

সাদা পাথরে ঘুরতে যাওয়া পর্যটক ঢাকার গাজীপুরের বাসিন্দা জাহিদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সাদা পাথর আগে যে পরিমাণ পর্যটক আসতো, এখন সেরকম নেই। মনে হয় না, এখন আসলে কেউ দ্বিতীয়বার আসবে! তারপরও ঘোরার মতো সুন্দর পরিবেশ আছে, এত খারাপ হয়ে যায়নি। পাথর আর জলরাশিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে ভ্রমণপ্রেমীরা।

ঢাকার খিলক্ষেত থেকে আসা হৃদয় হাসান বলেন, আগে যে রকম ছিল, তার দুই অংশ পাথর চলে গেছে। আগে যখন এসেছিলাম, তখন দেখছি, পাথর আর পাথর, এখন শুধু মরুভূমি। এরপরও এই স্থানটিকে টিকিয়ে রাখার উদ্যোগ অব্যাহত রাখা দরকার।

ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সদস্য আব্দুল বারি বলেন, সাদা পাথরে যে পরিমাণ পাথর লুট হয়েছে, এখনো এর এক শতাংশই ফিরিয়ে আনা হয়নি। আর কৃত্রিমভাবে যে পাথরগুলো বিছানো হয়েছে, সেগুলো প্রাকৃতিক আসল ভাব ফিরে আসবে না। তবে প্রশাসন পাথর ফেলায় আগের চেয়ে সৌন্দর্য ফিরে আসছে।

স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, লুট হওয়া সাদা পাথরের একটি বিশাল অংশ সিলেটের বাইরে চলে গেছে। অনেকে পাথর লুটে নিয়েছেন। আর ব্যবসার জন্য অনেকে এসব লুটের পাথর কিনে মজুত রেখেছিলেন। কেউবা সরাসরি লুণ্ঠিত পাথর মজুত রেখেছিলেন, সেগুলো প্রশাসন অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করেছে।

পাথর আর জলরাশিতে দেখতে ভ্রমণপ্রেমীরা।

২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে সাদাপাথর আশপাশের এলাকা থেকে কোটি কোটি টাকার পাথর লুট করে। আর গত জুলাই ও আগস্টে দুই সপ্তাহে সাদা পাথর এলাকায় নজিরবিহীন লুটপাটের ঘটনা ঘটে। ভোলাগঞ্জ নোম্যানস ল্যাণ্ডের ১০ নম্বর এলাকায় সাদা পাথরের স্তূপ এলাকাটি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। তাই নাম পড়ে যায় সাদা পাথর পর্যটন স্পট। প্রতিদিন পর্যটক মুখর থাকায় এই পর্যটন এলাকা ঘিরে নৌকা শ্রমিক, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে স্থানীয় মানুষের জীবন জীবিকার অন্যতম মাধ্যম হয়ে ওঠে। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ভোলাগঞ্জে পাথর লুটের মহোৎসব চলে।

জেলা ও স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশে পাথর খেকোরা লুটের ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। সমালোচনার কেবল মুখে কেবল ডিসিকে ওএসডি, এবং ইউএনকে বদলী করা হয়। যদিও সাদাপাথর আগের রূপে ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছেন সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক।

নতুন জেলা প্রশাসক আসার পর পাথর উদ্ধার অভিযানে গতি বাড়ানো হয়েছে। জব্দ পাথর সঠিকভাবে  সংরক্ষণ ও পুনঃস্থাপন কার্যক্রমের ফলে পরিবেশ রক্ষায় ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।  

এনইউ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।