ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২, ০৮ জুলাই ২০২৫, ১২ মহররম ১৪৪৭

ফুটবল

দ্য অ্যাথলেটিক/ 

অর্থ ও নিয়ন্ত্রণের খেলা—ফুটবলের ভবিষ্যৎ সৌদি আরবে?

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:১২, জুলাই ৭, ২০২৫
অর্থ ও নিয়ন্ত্রণের খেলা—ফুটবলের ভবিষ্যৎ সৌদি আরবে?

এই গ্রীষ্মে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ক্লাব বিশ্বকাপ ও কনকাকাফ গোল্ড কাপ—দুইটি বড় ফুটবল টুর্নামেন্টেই মাঠের খেলায় যেমন, তেমনি মাঠের বাইরের বাণিজ্য ও রাজনীতিতে সৌদি আরবের প্রভাব স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ তহবিল (পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড বা পিআইএফ) এখন ফিফা ও কনকাকাফের অন্যতম অংশীদার।

‘সৌদি আরামকো’, ‘রিয়াদ এয়ার’, ও ‘ভিজিট সৌদি’-র মতো সৌদি প্রতিষ্ঠানের প্রচার দেখা গেছে পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে।

এমনকি ক্লাব বিশ্বকাপের সম্প্রচার-স্বত্ব দেওয়া হয়েছে ‘ডিএজেডএন’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানে, যার আংশিক মালিকানা রয়েছে সৌদির ক্রীড়া শাখা ‘এসইউআরজে’-এর হাতে।

এমন প্রভাবশালী অবস্থান নেওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকারকর্মীরা। মধ্যপ্রাচ্য গণতন্ত্র কেন্দ্রের (এমইডিসি) পরিচালক আবদুল্লাহ আল-আউধ বলেন, ‘সৌদি আরবকে এসব চুক্তি অনুমোদন দেওয়া মানে হলো—মানবাধিকার পরিস্থিতির কোনো মূল্যায়নই হয়নি। ’

তার বাবা, একজন প্রখ্যাত আলেম, ২০১৭ সাল থেকে কারাবন্দি। আল-আউধ মনে করেন, ২০৩৪ বিশ্বকাপের আয়োজক নির্বাচনের আগে সৌদি আরবে ‘গভীর ও মৌলিক পরিবর্তন’ না ঘটিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা ছিল অমানবিক।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ফিফার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন তিনজন আন্তর্জাতিক আইনজীবী। তাদের দাবি, ফিফা নিজস্ব সংবিধানেই বলা মানবাধিকার নীতিমালা উপেক্ষা করেছে। যদিও ফিফার দাবি, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই সৌদি আরবকে ২০৩৪ বিশ্বকাপ দেওয়া হয়েছে, এবং সকল দরপত্র-সংক্রান্ত প্রতিবেদন ওয়েবসাইটে প্রকাশিত।

আল হিলাল ক্লাব চমক দেখিয়েছে ক্লাব বিশ্বকাপে। নতুন কোচ সিমোন ইনজাগি (সাবেক ইন্টার মিলান কোচ) জানিয়েছেন, তিনি আল হিলালকে বিশ্বমানের ক্লাবে পরিণত করতে চান।

সৌদি জাতীয় দলের স্ট্রাইকার সালেহ আল-শেহরি বলেন, ‘আমাদের যুবরাজের নেতৃত্বে সবকিছু নিখুঁতভাবে সাজানো হয়েছে। ’

যুক্তরাষ্ট্র দলের কোচ মরিসিও পচেত্তিনো এবং খেলোয়াড় টাইলার অ্যাডামস সৌদি লিগে রোনালদো, বেনজেমা, কঁতেদের সঙ্গে খেলার সুযোগকে তরুণদের জন্য ‘অভূতপূর্ব সুযোগ’ হিসেবে দেখছেন।

মিয়ামির হার্ড রক স্টেডিয়ামে এক সৌদি সমর্থক বললেন, ‘পশ্চিমা গণমাধ্যমে যা-ই বলা হোক না কেন, অর্থ ছাড়া কিছু গড়ে ওঠে না। খেলাধুলা হচ্ছে সফট পাওয়ার নির্মাণের সেরা মাধ্যম। ’

এদিকে, এমএলএস কমিশনার ডন গারবার বলেন, ‘আমাদের খেলাধুলার সৌন্দর্য এখানেই যে, এটা আমাদের ভাবনার বাইরের মানুষদের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করে। ’

গলফ, টেনিস, বক্সিংয়ের মতো ফুটবলেও সৌদি আরবের প্রভাব প্রতিনিয়ত বাড়ছে। মানবাধিকার বিতর্ক চলতে থাকলেও, সৌদি অর্থনীতি ও রাজনৈতিক কৌশলে গড়ে উঠছে এক নতুন ক্রীড়া পরাশক্তি। এখন প্রশ্ন হলো—এই উত্থানের মূল্য কে দিচ্ছে? ক্রীড়ামোদী দর্শক, না মানবতা নিজেই?

এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।