এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে প্রথমবারের মতো মূল পর্বে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। টানা তিন ম্যাচে জয় তুলে নিয়ে ইতিহাস গড়েছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
আজ গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, অনুশীলন সুবিধা, আত্মবিশ্বাস এবং কোচিং স্টাফ নিয়ে নিজের ভাবনার কথা জানান অধিনায়ক আফঈদা খন্দকার। “এতদিনের কষ্টের ফল আজ আমরা পাচ্ছি,”– এমনই আবেগভরা কণ্ঠে কথা শুরু করেন আফঈদা। “দীর্ঘদিন ধরে আমরা এই টুর্নামেন্টকে লক্ষ্য করে পরিশ্রম করে যাচ্ছি। এই সাফল্য সেই কষ্টেরই প্রতিদান। ”
ভবিষ্যৎ লক্ষ্য সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী এই মিডফিল্ডার। হাতে থাকা সময়কে কাজে লাগিয়ে নিজেকে আরও প্রস্তুত করে তুলতে চান তিনি। এশিয়ান কাপে ভালো পারফরম্যান্স করলে বিশ্বকাপ ও অলিম্পিকে খেলার স্বপ্নও দেখছেন আফঈদা, “এখনও তো ছয় মাস সময় আছে। আমরা চাই প্রথমে অলিম্পিক কোয়ালিফাই করতে। এটাই আমাদের প্রথম টার্গেট। এরপর বিশ্বকাপের চিন্তা করব। ”
এই আত্মবিশ্বাসের সূচনা জর্ডানের বিপক্ষে ২-২ গোলে ড্র করা ম্যাচ থেকেই। এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশের অধিনায়ক, “জর্ডানের সঙ্গে যখন আমরা গোল খেয়েও ম্যাচে ফিরে এসেছি, তখনই মনে হয়েছে, আমরাও পারি। এরপর বাহরাইনের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে জয়ের পর আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে গেছে। ”
তবে সামনে এগোতে হলে আরও শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলার প্রয়োজনীয়তার কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি, “আমরা জর্ডান, ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে খেলেছি। এখন আরও ভালো করতে হলে তাদের চেয়েও শক্তিশালী দলের সঙ্গে খেলার দরকার। ”
কোচ পিটার বাটলারকে নিয়ে আফঈদার মূল্যায়ন, “উনি আমার চোখে খুব ভালো কোচ। একজন কোচ যেমন হওয়া উচিত, তিনি ঠিক তেমনই পারফেক্ট কোচ। ”
নারী দলের অনুশীলন, পুষ্টিকর খাবার, জিম সরঞ্জামসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা আরও উন্নত হওয়া দরকার বলে মনে করেন অধিনায়ক, “স্যার (ফেডারেশন সভাপতি) তো বলেই দিয়েছেন, কোনো দিক থেকে কমতি থাকবে না। তবে আমাদের আরও ভালো ফ্যাসিলিটি দরকার। মাঠ, খাবার, জিম—সব দিক থেকেই উন্নয়ন হলে আমরা আরও ভালো করতে পারব। ”
সাফল্যের ভেলায় ভাসলেও বাস্তবতা কিছুটা ভিন্ন। জানা গেছে, এখনো প্রায় দুই মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে কয়েকজন নারী ফুটবলারের। এ বিষয়ে আফঈদা জানান, “মিয়ানমারের সঙ্গে খেলার পর আমি কিরন ম্যাডামের সঙ্গে বেতন নিয়ে কথা বলি। উনি বলেছিলেন, ফেডারেশনে এসে বিষয়গুলো দেখবেন। ”
দেশে নিয়মিত ঘরোয়া নারী লিগ না হওয়াকেও বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন অধিনায়ক। নারী লিগ নিয়মিত হলে ফুটবলাররা আর্থিকভাবে কিছুটা স্বস্তি পান বলে মনে করেন তিনি, “যদি লিগটা নিয়মিত হয়, তাহলে জেলা থেকে উঠে আসা ফুটবলারদের জন্য অনেক সুবিধা হবে। আর্থিকভাবেও তারা উপকৃত হবে। ফেডারেশনের কাছে এটুকু চাওয়া থাকবে। ”
সাবেক অধিনায়ক সাবিনা খাতুনকে নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ‘নো কমেন্টস’ বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান আফঈদা। তবে দলের সিনিয়রদের গুরুত্ব স্বীকার করে বলেন, “ফুটবল একটা টিমওয়ার্ক। সবাই মিলে আমরা কাজটা করছি। ”
সবশেষে সবার কাছে দোয়া চেয়ে আফঈদা বলেন, “১১ তারিখ থেকে অনূর্ধ্ব-২০ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হচ্ছে। সবাই দোয়া করবেন যেন আমরা সেখানেও ভালো করতে পারি। ”
এআর/আরইউ