ঢাকা: সাংবাদিকদের জন্য বিশ্বে সবচাইতে বিপজ্জনক দেশ সিরিয়া। এরপরেই রয়েছে ইউক্রেন ও ইরাক।
সব মিলিয়ে এ বছর মোট ৩৭ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ২০১৩ সালে ৭০ জন, ২০১২ সালে ৭৪ জন এবং ২০১১ সালে ৪৭ জনসহ চার বছরে দুইশ ২৮ জন সাংবাদিক নির্মম হত্যার শিকার হয়েছেন। কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে) এ তথ্য জানিয়েছে।
সিপিজের পরিসংখ্যান মতে সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে বিশ্বে বিপজ্জনক দেশগুলো হচ্ছে-
প্রথমত, সিরিয়া। এখানে এ বছর আটজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন; তালিকায় যৌথভাবে দ্বিতীয় দেশ হচ্ছে, ইরাক ও ইউক্রেন। এই দেশ দুটিতে পাঁচজন করে মোট ১০ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে- ইসরায়েল ও ইসরায়েল অধিকৃত প্যালেস্টাইন। এখানে চার সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। চতুর্থতম স্থানে রয়েছে, পাকিস্তান। এখানে এ বছর তিন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
পঞ্চম স্থানে রয়েছে- প্যারাগুয়ে, ব্রাজিল ও আফগানিস্তান। এ দেশগুলোতে দুইজন করে সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এরপর ষষ্ঠস্থানে রয়েছে- সোমালিয়া ও মিশর। এই দেশ দুটিতে একজন করে মোট দুইজন সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন।
ইরাকের বেশকিছু অঞ্চল নিজেদের দখলে রেখেছে দ্য ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়ার (আইএসআইএস/আইএস) জঙ্গি বাহিনী। ইতোমধ্যে তারা মার্কিনি দুই সাংবাদিক, ব্রিটেনের এক ত্রাণকর্মীর শিরশ্ছেদ করেছে।
কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে) সম্প্রতি ‘জার্নালিম আন্ডার ফায়ার ইন সিরিয়া’ শিরোনামে একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে।
সিপিজে জানায়, ২০১১ সালে বিশ্বব্যাপী দুইশ ২৭ জন সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ সাংবাদিক সিরিয়ায় খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে নিহত হন।
এ ছাড়া তিন বছরের প্রেসিডেন্ট বাশার বিরোধী আন্দোলনে ও পরস্পরবিরোধী বিভিন্ন গ্রুপের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে ৮০ জনেরও বেশি সাংবাদিক (স্থানীয় ও বিদেশি) অপহৃত হয়েছেন।
সংস্থাটি জানায়, ২০১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত সিরিয়ার যুদ্ধের খবর সরাসরি সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রতিপক্ষের গুলি বিনিময়ের সময় ৭১ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এবাদেও সিরিয়ায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২০ জন সাংবাদিক নিখোঁজ রয়েছেন।
সংস্থাটি জানায়, বিগত তিন বছরে বিশ্বে যে দুইশ ২৭ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, এর ৮৫ শতাংশই সিরিয়ার স্থানীয় সাংবাদিক।
সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) জানায়, ১৯৯২ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বিশ্বে এক হাজার ৭৬ সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে।
শুধু এ বছরই বিশ্বে এ পর্যন্ত ৩৭ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়। এর মধ্যে খবর সংগ্রহের সময় ১২ জন, ক্রসফায়ারে ১৫ জন ও বিপজ্জনক অ্যাসাইমেন্ট কাভার করতে গিয়ে আরো ১০ সাংবাদিক নিহত হন।
২০১৪ সালে খবর সংগ্রহে নিহত ১২
২০১৪ সালে খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে ১২ জন সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন। এরা হলেন- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক স্টিফেন সোটলোফ। আগস্ট অথবা সেপ্টেম্বর মাসে তাকে সিরিয়ায় হত্যা করে আইএস জঙ্গি বাহিনী, ২৮ আগস্ট পাকিস্তানের কোয়েটায় খুন হন অনলাইন ইন্টারন্যাশনাল নিউজ নেটওয়ার্ক, অ্যারি নিউজের ইরশাদ মাস্তই। একই সময়ে কোয়েটাতেই আরো একজন পাকিস্তানি সাংবাদিক হত্যার শিকার হন। তার নাম গুলাম রসুল। তিনি অনলাইন ইন্টারন্যাশনাল নিউজ নেটওয়ার্কের সাংবাদিক।
এর আগে আগস্ট মাসে মার্কিনি ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক জেমস ফোলেকে সিরিয়ায় শিরশ্ছেদ করা হয়।
২১ জুন সোমালিয়ার মোগাদিসুতে রেডিও এরগো, মুস্তাকবাল রেডিওর সাংবাদিক ইউসুফ আহমেদ আবুকর হত্যার শিকার হন। এর দুদিন আগে ১৯ জুন প্যারগুয়ের কনসেপসনে বেলেন কমিউনিকেশনসের সাংবাদিক এডগার প্যান্টালিয়ন ফার্নান্দেজ ফেলিইটাস নিহত হন। ২৬ মে লিবিয়ার বেনগাজিতে মুফতাহ বু জেইড নামে ব্রেইনিক সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিক নিহত হন।
১৬ মে প্যারাগুয়ের পেড্রো জুয়ান ক্যাবেলেরো এলাকায় রেডিও আমামবে-র সাংবাদিক ফুয়াস্তো গেব্রিয়েল আলকারেজ গ্যারে নিহত হন।
এ বছরের ফেব্রুয়ারির ৫ তারিখ থেকে ১১ তারিখের মধ্যে মেক্সিকোর ভেরাক্রুসের লা চোপাসে নোটিসুর অ্যান্ড লিবারেল ডেল সুরের সাংবাদিক জর্জিও জিমেনেজ ডি লা ক্রুস নিহত হন।
১৯ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের কিয়েভে ভেস্তি সংবাদমাধ্যমের ভাচিস্লাভ ভেরেমি এবং ১ জানুয়ারি পাকিস্তানের লারকানায় আব তক টেলিভিশনের সাংবাদিক শান দহার নিহত হন।
ক্রসফায়ারে নিহত ১৫
২০১৪ সালে খবর সংগ্রহের সময় ক্রসফায়ারে বিশ্বে নিহত হয়েছেন ১৪ জন সাংবাদিক। এর মধ্যে ইসরায়েল ও ইসরায়েল অধিকৃত ফিলিস্তিনি অংশে চারজন সাংবাদিক, সিরিয়ায় চারজন, ইউক্রেনে তিনজন, ইরাকে দুইজন, মিশরে একজন ও কঙ্গোতে একজন সাংবাদিক ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন।
১৩ আগস্ট ইসরায়েল ও ইসরায়েল অধিকৃত ফিলিস্তিনি অংশের গাজায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) সাংবাদিক সিমোন ক্যামিলি ক্রসফায়ারে নিহত হন।
৮ আগস্ট ইরাকের মখমুর জেলায় ক্রসফায়ারে নিহত হন ফিরাত নিউজ এজেন্সির সাংবাদিক লেয়লা ইলডিঝান নিহত হন।
এরপর ৩০ জুলাই আল-আকসা টিভির সাংবাদিক সামেহ আল-আরিয়ান ও প্যালেস্টাইন নেটওয়ার্ক ফর প্রেস অ্যান্ড মিডিয়ার সাংবাদিক রামি রেয়ান ইসরায়েল অধ্যুষিত গাজার শিজাইয়ায় নিহত হন।
২০ জুলাই একই এলাকায় কন্টিনিউ প্রোডাকশন ফিল্মসের খালেদ রায়েদ হামাদ ক্রসফায়ারে নিহত হন। এছাড়া ১৭ জুলাই ইউক্রেনের মেটালিস্টে ভিজিটিআরকে-এর সাংবাদিক ইগর করনেলাইয়ুক দুইপক্ষের গুলিবিনিময়ের সময় গুলিতে নিহত হন। এরপর ১৫ জুন ইরাকের ডিয়ালা প্রদেশে আল-আহাদ টিভির খালিদ আলী হামাদ নিহত হয়েছেন।
২৪ মে ইউক্রেনের আন্দ্রিয়েভেকা অঞ্চলে সেচুরা ফটো এজেন্সির আন্দ্রিয়া রচিলি নিহত হন। ২৫ এপ্রিল সিরিয়ার হামা প্রদেশের কাফর জিটা এলাকায় মৌজা আলা মোর (আবু মেহেদি আল হামই) নামে ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক নিহত হন।
মিশরের কায়রোতে মায়াদ আশরাফ নামে আল-দাস্তাউর সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিক ২৮ মার্চ নিহত হন। ৯ মার্চ সিরিয়ার আলেপ্পোতে আলী মুস্তাফা নামে একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক নিহত হন। ৮ মার্চ সিরিয়ার ডের আল-জাউর এলাকায় আল-মায়াদিন সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিক গুলিতে হন। ২০ ফেব্রুয়ারি সিরিয়ার ইয়াব্রোড এলাকায় তুরাদ মোহামেদ আল-জাহোরি নামে একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক নিহত হন।
এর আগে ১৬ ফেব্রুয়ারি কঙ্গো রিপাবলিকের ওইচা এলাকায় রেডিও টেলিভিশন মানগানোর সাংবাদিক জারমেইন কেনেডি মুম্বেরে মুলিওয়াভিও নামে একজন সাংবাদিক গুলিতে নিহত হন।
বিপজ্জনক অ্যাসাইমেন্ট কাভারে নিহত ১০
২০১৪ সালে বিপজ্জনক জেনেও অ্যাসাইমেন্ট নিয়ে সংবাদ সংগ্রহের সময় ১০ জন সাংবাদিক নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এরা হলেন- আনাতোলি ক্লিয়ান। তিনি ৩০ জুন ইউক্রাইনের ডোনেটস্কে নিহত হন। তিনি পারভি কানাল সংবাদমাধ্যমের এক সাংবাদিক। ২০ জুন সিরিয়ার দামেস্কে নিহত হন শিনহুয়া সংবাদ সংস্থার আহমেদ হাসান আহমেদ।
মে মাসে সেন্টাল আফ্রিকা রিপাবলিকের বোর রিজিয়নে ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ক্যামেলি লিপেজ নিহত হন।
প্যালেস্টাইন টুডে টিভির সাংবাদিক বিলাল আহমেদ বিলাল সিরিয়ার সেডনায়াতে নিহত হন। তবে তার নিহত হওয়ার তারিখ জানা যায়নি।
৪ এপ্রিল আফগানিস্তানের খোস্টে নিহত হন বার্তা সংস্থা এপির সাংবাদিক অঞ্জা নেইড্রিঙ্কসহাস। ১১ মার্চ আফগানিস্তানের কাবুলে এসভেরজেস রেডিওর সাংবাদিক নিলস হরনার নিহত হন। ১০ মার্চ ইরাকের বাবিল প্রদেশে দুই সাংবাদিক নিহত হন। এরা হলেন আল-আরাবিয়ার মুথান্না আবদেল হুসাইন ও খালেদ আবদেল থামার।
১০ ফেব্রুয়ারি ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিওতে বান্দেইরানেটসের সাংবাদিক সান্টিয়াগো ইলিডিও আন্দ্রেদ এবং ২০ জানুয়ারি ফাল্লুজাহ টিভির সাংবাদিক ফিরাজ মোহাম্মেদ আত্তিয়াহ ইরাকের খালিদিয়াদে নিহত হন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৪