ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৫ মে ২০২৫, ১৭ জিলকদ ১৪৪৬

সারাদেশ

ঐশীর স্বপ্ন পূরণের গল্প

মো. আমিরুজ্জামান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০:৪৫, মে ১৫, ২০২৫
ঐশীর স্বপ্ন পূরণের গল্প তানিসা তানভী ঐশী

মাত্র ৫০০ টাকা পুঁজি। আর সেই সামান্য টাকাই এখন প্রতিমাসে এনে দিচ্ছে লাখ টাকা।

অদম্য সাহস, সৃজনশীলতা আর উদ্যোগ নিলে কীভাবে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়া যায়, তার উজ্জ্বল উদাহরণ ১৭ বছরের কিশোরী তানিসা তানভী ঐশী। সে নিজ হাতে তৈরি করছে শোপিস, বিক্রি করছে দেশে ও বিদেশে।  গড়ে তুলেছে নিজস্ব একটি ক্ষুদ্র উদ্যোগ।

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার বাসিন্দা ঐশী ২০২৩ সালে রাজধানীর পিলখানাস্থ বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রব স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করে। এরপর উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে ভর্তি হন নিজ জেলার তিস্তা কলেজে। পরিচিত শহুরে পরিবেশ ছেড়ে হঠাৎ গ্রামে ফিরে এসে পড়াশোনার পাশাপাশি একাকীত্বে ভুগতে থাকে সে।

এই একাকীত্ব কাটাতে আশ্রয় নেয় ছোটবেলার একটি শখ-নকশা আঁকা ও অলঙ্করণ। নানি আমেনা বেগমের কাছ থেকেই ঐশী শিখেছিলেন এই শিল্প। সেই জ্ঞান আর সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে ঘরেই কংক্রিটের শোপিস তৈরি শুরু করে। শুরুর উদ্দেশ্য ছিল শুধুই নিজের ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা। কিন্তু শিগগিরই ঐশী বুঝতে পারে, এই শিল্প দিয়ে গড়ে তোলা সম্ভব একটি স্বপ্নের ভবিষ্যত।

একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ‘ইপপা’-তে প্রথম শোপিস বিক্রি করে মাত্র ৩০০ টাকায়। সেখান থেকেই শুরু হয় ঐশীর উদ্যোক্তা-জীবন। ধীরে ধীরে তার তৈরি পণ্যের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে, ছড়িয়ে পড়ে দেশ থেকে বিদেশে। বন্ধুবান্ধব ও পরিচিতদের সহায়তায় প্রসার বাড়ে তার ব্যবসার। মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে সে এখন প্রতি মাসে আয় করছে প্রায় লাখ টাকা।

এই সফলতার পাশাপাশি ঐশী তার উপার্জন থেকে আরও দুই কিশোরকে সহকারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে, যাদের পড়াশোনার খরচও নিজেই বহন করছে। ভবিষ্যতে আরও কজনকে নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছে ঐশী।

নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে ঐশী বলে, “টাকা উপার্জনের কোনো বয়স নেই। ইচ্ছা, পরিশ্রম ও আন্তরিকতা থাকলে যে কেউ কিছু করতে পারে। আমি প্রথমে যখন অনলাইনে ৩০০ টাকার অর্ডার পাই, তখনই সাহসটা আরও বেড়ে যায়। ” বন্ধু-বান্ধবদের সহযোগিতার কথাও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে সে।

শুধু নিজের স্বপ্ন পূরণেই থেমে থাকেনি ঐশী। সে চায় তার চারপাশের গ্রামীণ তরুণ-তরুণীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে। বেকারত্ব দূরীকরণে নিজের জায়গা থেকে ভূমিকা রাখার স্বপ্ন দেখে সে।  

ঐশীর বাবা তিস্তা কলেজের অধ্যক্ষ মোখলেছুর রহমান বলেন, মেয়ে এসব ক্রাফটের কাজ করতে পারে জানতাম। তবে আমাদের শর্ত ছিল, পড়াশোনাটা আগে। সেটাই সে মেনে চলছে।

ঐশীর মা দিলরুবা ইয়াসমিন একজন স্কুল শিক্ষিকা, তিনি বলেন, “মেয়ে গোপনে এসব তৈরি করত। পরে জানতে পেরে অবাক হয়েছি। এখন আমরা ওকে সৃজনশীলতার পাশাপাশি পড়াশোনাতেও উৎসাহ দিচ্ছি। আমরা মেয়েকে ইচ্ছার স্বাধীনতা দিয়েছি। ”

এ বিষয়ে জেলা শিল্প সহায়তা কেন্দ্রের (বিসিক) কর্মকর্তা নূরেল হক জানান, “ঐশীর শোপিস তৈরির কথা সাংবাদিকদের মাধ্যমে জেনেছি। যদি সে সহযোগিতা ও বাজার ব্যবস্থাপনার বিষয়ে আমাদের সাহায্য চায়, আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা করে দিতে পারি। ”

তানিসা তানভী ঐশী আজ শুধু একজন কিশোরী উদ্যোক্তা নন, তিনি হয়ে উঠেছেন অনুপ্রেরণার এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। তার গল্প প্রমাণ করে দেয়—স্বপ্নের পেছনে সৎ সাহস আর নিষ্ঠা নিয়ে এগিয়ে গেলে, অল্প পুঁজি থেকেও গড়ে তোলা যায় সফলতার এক উজ্জ্বল ভবিষ্যত।

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।