ঢাকা, বুধবার, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২, ৩০ জুলাই ২০২৫, ০৪ সফর ১৪৪৭

সারাদেশ

তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে, লালমনিরহাটে বন্যা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২:৫০, জুলাই ৩০, ২০২৫
তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে, লালমনিরহাটে বন্যা তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্ট। সংগৃহীত ফাইল ছবি

লালমনিরহাট: উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তা নদীর পানি হু হু করে বেড়ে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে তিস্তাপাড়ের হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাত ৯টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ২০ মিটার, যা বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ১৫ মিটার থেকে ৫ সেন্টিমিটার বেশি।

নদীপাড়ের মানুষ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে ভারতের উজানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় তিস্তা নদীতে পানির প্রবাহ বেড়ে গেছে। যদিও কয়েকদিন ধরে পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি ছিল, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তা অতিক্রম করে। এরপর রাত ৯টায় বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হয় এবং পানি ক্রমাগত বাড়ছে।

ফলে তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তিস্তাপাড়ের হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তিস্তার চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট ও ফসলের মাঠ ডুবে গেছে। অনেক এলাকায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, সেখানে একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম এখন নৌকা ও ভেলা। ঢলের পানিতে আমন ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত এবং মাছের পুকুরও ক্ষতির মুখে পড়েছে।

তিস্তা নদী লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সামান্য পানি বাড়লেই পুরো জেলাজুড়ে নদী তীরবর্তী এলাকাগুলো প্লাবিত হয়। এবারের উজানের ঢলের কারণে জেলার পাঁচটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। পানি বাড়তে থাকলে আরও নতুন নতুন এলাকা বন্যার কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।

বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাত ৯টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে বলে সতর্ক করেছে কর্তৃপক্ষ। নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

গড্ডিমারী ইউনিয়নের বাসিন্দা শামসুল আলম বলেন, উজান থেকে প্রচুর পানি আসছে। ইতোমধ্যে নিচু এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করেছে। পরিবারগুলো পানিবন্দি হয়ে পড়েছে, রাস্তাঘাট ডুবে গেছে।

আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবরধন গ্রামের আব্দুর রশিদ বলেন, উজানের ঢলে পানি বাড়ছে। চরাঞ্চলের কিছু বাড়ি ইতোমধ্যে পানিবন্দি। যেভাবে পানি বাড়ছে, তাতে বড় বন্যার ভয় করছি। এ বছর এখনো বড় বন্যা হয়নি।

সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আরিফুল ইসলাম বলেন, সন্ধ্যার পর থেকেই পানি হু হু করে বাড়ছে। আমার ইউনিয়নের প্রায় দেড় হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সড়ক ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

লালমনিরহাট পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার বলেন, উজান থেকে পানি আসায় তিস্তার পানি বাড়ছে। সন্ধ্যায় ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমায় ছিল, রাত ৯টায় তা ৫ সেন্টিমিটার ওপরে পৌঁছায়। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে, তাই নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। আমরা সার্বক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, নদী তীরবর্তী এলাকার খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। বন্যা দেখা দিলে তা মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শুকনো খাবার ও ঢেউটিন মজুদ রয়েছে। সরকারি প্রস্তুতি আছে।

এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।