ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২, ৩১ জুলাই ২০২৫, ০৫ সফর ১৪৪৭

সারাদেশ

ঝুঁকিতে কুষ্টিয়া আদালত, অব্যবস্থাপনাকে দুষছেন ভুক্তভোগীরা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:১০, জুলাই ৩০, ২০২৫
ঝুঁকিতে কুষ্টিয়া আদালত, অব্যবস্থাপনাকে দুষছেন ভুক্তভোগীরা

কুষ্টিয়া: একটু বৃষ্টি হলেই ছাদ থেকে চুইয়ে পানি পড়ে, ভীজে যায় আদালতের গুরুত্বপূর্ণ নথি। ছাদ ফেটে পলেস্তারা খসে নিচে কর্মচারীদের শরীরে পড়ছে।

এই করুণ অবস্থা কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের দ্বিতল ভবনের।

এছাড়া নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো না থাকায় পুরো বর্ষা মৌসুমই পানিতে ডুবে থাকে আদালত চত্ত্বর ও ভবনের চারপাশ। এর ফলে একদিকে বিচারিক কার্যক্রমের সকল বিভাগে নিযুক্ত কর্মী, অন্যদিকে আদালতে আগত বিচার প্রার্থী-সবাই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার মধ্য দিয়ে নিজেদের কাজ সারতে বাধ্য হচ্ছেন। পানিতে নষ্ট হওয়ার মুখে রয়েছে ভবনের মূল্যবান নথিপত্র।  

বিষয়টি নিয়ে গণপূর্ত বিভাগের অবহেলা ও অব্যবস্থাপনাকে দুষছেন ভুক্তভোগীরা। গণপূর্ত বিভাগ বলছে, পুরনো ভবনের সংস্কার না হওয়ায় এমনটি হয়েছে। যতদিন নতুন ভবন না হচ্ছে ততদিনে ভবনটিকে মজবুতিকরণের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। সেটি বাস্তবায়িত হলেই ভোগান্তির নিরসন হবে।

কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নাজির মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘ভবনের ছাদে ক্রাক দেখা দিয়েছে, ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। ছাদের চটা ভেঙে পড়ে। প্রতিটি রুমেই একই অবস্থা। এখানে আদালতের গুরুত্বপূর্ণ নথি থাকে যেগুলো নষ্ট হচ্ছে। আমরা এর স্থায়ী সমাধান চাই’।  

তিনি বলেন, ‘ড্রেনেজ ব্যবস্থা খুবই খারাপ। একদিনের বৃষ্টিতেই পানি বেধে থাকে। এমনকি বিচারকদের জুতা খুলে পানির মধ্য দিয়ে আদালতে আসতে হয়। আমরা সংশ্লিষ্ট গণপূর্তি বিভাগকে সংস্কারের জন্য জানিয়েছি। এটা প্রায় ১০ বছর ধরেই চলছে। প্রতিবারই নামমাত্র সংস্কার করে। তবে আমরা এর স্থায়ী সমাধান চাই’।

কুষ্টিয়া বিচার বিভাগীয় কর্মচারী সমিতির সভাপতি ফজলুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ‘আমরা এখানে প্রায় তিনশ’ মানুষ কর্মরত। যারা প্রতেক্যেই ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে। মাথার ওপরে যে কোন সময় ছাদের প্লাস্টার খসে পড়ে। এছাড়া বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। আমরা এর স্থায়ী সমাধান বা নতুন ভবনের দাবি করছি’।

প্রতি বছর নামকাওয়াস্তে ফলাফল শুণ্য সংস্কার কাজের তীব্র সমালোচনা করে জরুরি ভিত্তিতে উদ্ভুত পরিস্থিতির সমাধানের দাবি জানান আদালত অঙ্গণে দায়িত্বরত কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ বিশেষ আদালতের সরকারী কৌসুলি শামীমুল হাসান অপু।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘ড্রেনগুলোর বর্তমানে বেহাল অবস্থা। ময়লা আবর্জনা পড়ে, দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করায় পানি ওভারফ্লো হয়ে যাচ্ছে। পানি জজ কোর্টের চারিদিকে আটকে রয়েছে। ভবনটি পুরাতন হওয়ায় প্রতি বছরই নামমাত্র রিপিয়ার করা হয়, যাতে কাজের কাজ কিছুই হয় না। আমরা এগুলোর স্থায়ী সমাধান ছাড়া সংস্কারে তেমন ফল দেখি না। তাই অনতিবিলম্বে এর সমাধান চাই’।

জেলা ও জজ আদালতের ভবনটি পুরাতন হওয়ায় এমন পরিস্থিতির হয়েছে বলে স্বীকার করে গণপূর্ত বিভাগের কুষ্টিয়ার উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ফারুক হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ইতিমধ্যে একটি বিশেষজ্ঞ টিম এসে ভবনটি রেট্টো ফিটিংস অ্যান্ড স্টেনদেনিং (শক্তিশালীকরণ বা মজবুতিকরণ) কাজের সম্ভাব্যবতা পর্যবেক্ষণ করেছেন। নতুন ভবন না হওয়া পর্যন্ত ভবনটিকে মজবুত তরার কাজ বাস্তবায়ন হলেই বিদ্যমান ভোগান্তি ও ঝুঁকি নিরসন হবে’।  

একইসাথে পানি নিষ্কাশনে পৌরসভা, সড়ক বিভাগ ও গণপূর্ত বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া বিদ্যমান জলাবদ্ধতা দূরীকরণের আর কোন বিকল্প নেই। কারণ বড় বড় সড়ক সংযুক্ত প্রধান ড্রেনগুলি নির্মিত হয়েছে আপলেয়ার ধরে; ফলে সমতল এলাকার পানি আর মূল ডেনে যেতে পারছে না।

এবিষয়ে কথা বলতে চাননি কুষ্টিয়া পৌরসভার সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী। তবে তারা প্রতিনিয়ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নে কাজ করছে বলে দাবি করে পৌর কর্তৃপক্ষ।

এসএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।