যশোর: যশোর সদরসহ তিনটি উপজেলায় দশ হাজার শিশু শ্রমে নিযুক্ত রয়েছে। তারা কাজ করছে ৫৩টি সেক্টরে।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) এই তথ্য জানিয়েছে আব্দুর রশিদ খান ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থা। এদিন সকালে সংস্থার যশোর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের নিয়ে আয়োজিত এক অ্যাডভোকেসি সভায় এই তথ্য তুলে ধরেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক প্রদীপ মার্সেল রোজারিও।
সভায় বলা হয়, ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনে কাজ করার জন্য খান ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে যশোর সদর, অভয়নগর উপজেলার শিল্পশহর নওয়াপাড়া এবং শার্শা উপজেলার নাভারণে একটি বেজলাইন সার্ভে করা হয়। যশোর জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে তারা এই সার্ভে পরিচালনা করে।
ওই সার্ভের মধ্য দিয়ে সংস্থাটি উল্লেখিত তিনটি এলাকায় নয় হাজার নয়শ’ ৮০ জন শিশু শ্রমিকের সন্ধান পেয়েছে। এসব শিশুর মধ্যে সদর উপজেলায় রয়েছে চার হাজার নয়শ’ ৯৯, নওয়াপাড়ায় তিন হাজার চারশ’ ৮৮ এবং নাভারণে এক হাজার চারশ’ ৯৯।
শ্রমে নিযুক্ত শিশুদের মধ্যে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুর সংখ্যা তিন হাজার নয়শ’ ৩৮ এবং ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী ছয় হাজার ৪২। এসব শিশুর পাঁচ হাজার সাতশ’ ছেলে এবং চার হাজার দুশ’ ৮০ মেয়ে।
জানানো হয়, মূলত অধিক শ্রমঘন এলাকা হিসেবে খান ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে যশোরের এই তিন জেলাতে জরিপ এবং পরবর্তীতে কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়।
এসব এলাকার শিশুরা যেসব ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমের সাথে জড়িত রয়েছে তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য বিড়ি, লেদ, ডেন্টিং ও পেইন্টিং, জুয়েলারি, ইটভাটা, পাটা-শিল, কয়লার ডাম্পিং, নৌবন্দর, নির্মাণ, বাসের হেলপার, রিকশা-ভ্যান-নসিমন-করিমন চালক, স’মিল ইত্যাদি।
এসব শিল্পের অনেকগুলোতে বিষাক্ত ও ক্ষতিকর কেমিক্যালও ব্যবহার করা হয়। অনেকগুলোতে দুর্ঘটনার প্রবণতা তুলনামূলক বেশি। সে কারণে এই শিল্পের শিশু শ্রমিকেরাও রয়েছে চরম ঝুঁকিতে।
শ্রমের সাথ নিযুক্ত শিশুদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য বিনষ্ট হচ্ছে, স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে, দারিদ্র্যের দুষ্ঠুচক্রে পতিত হচ্ছে। এমনকী তারা মারাত্মক ট্রমায় আক্রান্ত হচ্ছে।
সভায় বলা হয়, শ্রমে নিযুক্ত শিশুরা প্রায় সবাই হতদরিদ্র ও অসহায় পরিবারের সন্তান। ফলে তারা বাধ্য হয়েই শ্রমে নিযুক্ত হয়েছে।
সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইতিমধ্যে খান ফাউন্ডেশন তিন এলাকায় ১৪ বছর বয়সী শিশুদের শ্রম থেকে বের করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে একটি প্রকল্প পরিচালনা করছে। এই প্রকল্পের আওতায় তারা অন্যান্য শিশু শ্রমিকদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের উদ্যোগ চালিয়ে যাচ্ছে।
পাশাপাশি প্রকল্প এলাকায় শিশু শ্রমিকদের সাথে পরোক্ষভাবে জড়িত দশ হাজার মানুষকে চিহ্নিত করে তাদেরকে সচেতন করার মধ্য দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনে নানা কর্মসূচিও পরিচালনা করা হচ্ছে।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন খান ফাউন্ডেশনের প্রজেক্ট অফিসার সোহান উদ্দীন ও শাহানাজ পারভীন এবং মনিটরিং ও জব ক্রিয়েশন অফিসার শেখ ওয়াহিদ আব্দুল্লাহ।
এসএইচ