চাঁদপুর: চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে নিখোঁজের ৩৬ ঘণ্টা পর তিন বছরের শিশুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শিশুটির হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত চাচি সাথী আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাত ১২টার দিকে বাড়ির পাশের পুকুর থেকে শিশুটির বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করা হয়।
শিশুর বাবা রুবেল পাটওয়ারী সাথী আক্তারকে (২০) আসামি করে শুক্রবার ( ৫ সেপ্টেমর) শাহরাস্তি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, উপজেলার চিতোষী পূর্ব ইউনিয়নের পানচাইল গ্রামের পাটওয়ারী বাড়ির ট্রাকচালক রুবেল পাটওয়ারীর শিশু সন্তান তাসনুহা তাবাসসুম বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নিখোঁজ হয়।
পরিবারের সদস্যরা তাকে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। বাড়ির কোথাও খুঁজে না পেয়ে একপর্যায়ে বাড়ির পুকুরে ডুবুরি দল নামিয়ে তল্লাশি করে। তাতেও না পেয়ে পরবর্তীতে পুকুরে জাল ফেলে ও শিশু তাসনুহাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে বাড়ির লোকজন পুকুরে বস্তাবন্দি কিছু ভাসতে দেখে বস্তাটি ওপরে তোলে। তাতে শিশুর লাশ দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে পুলিশে খবর দেয়।
খবর পেয়ে শাহরাস্তি থানা পুলিশ শিশুর লাশ উদ্ধার করে। এর পর পুলিশ ও এলাকাবাসী তল্লাশি চালিয়ে শিশুটির চাচার ঘরের বিভিন্ন স্থানে রক্তের চিহ্ন দেখতে পায়।
এ সময় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চাচা রিপন পাটওয়ারী ও চাচি সাথী আক্তারকে আটক করে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মাওলানা আমিনুল হক বলেন, আমার আগেই সন্দেহ হয়েছিল। পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর আমি ঘর তল্লাশি করতে বলি। তখন পুলিশ শিশুটির চাচার ঘর তল্লাশি করে কিছু আলামত দেখতে পায়। পরে সাথী আক্তার ও তার স্বামী রিপনকে আটক করলে চাচি পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দেয় সে শিশু তাসনুহা তাবাসসুমকে হত্যা করেছে।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, শিশু তাসনুহা বুধবার সকাল ১০টার দিকে পাশেই তার চাচা রিপনের ঘরে চাচাতো ভাইদের সঙ্গে খেলতে যায়। একপর্যায় তার চাচি সাথী ভাতের মাড় গালতে গিয়ে ওই গরম মাড় ছিটকে তাসনুহার শরীরে এসে পড়লে তার শরীর ঝলসে যায়। এক পর্যায়ে তাসনুহা চিৎকার করে করে উঠে। তখন চাচি সাথী আক্তার চিৎকার যেন অন্য কেউ শুনতে না পায় সেজন্য তার মুখ এবং গলাচেপে ধরে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে । এরপর তাসনুহার লাশ কম্বলে পেচিয়ে ঘরের আলমিরাতে রাখে। পর ঘটনার দিন সন্ধ্যা বেলায় আলমিরা থেকে নিয়ে ঘরের ওপরে সিলিং ( কাড়) এর ওপরে বস্তায় বেঁধে একটা বড় পাতিলে রাখে।
সেখান থেকে পরদিন বৃহস্পতিবার দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকলে সাথী আক্তারের স্বামী রিপন সিলিং এর ওপরে উঠে দেখে ভাতিজির লাশ ওই পাত্রে। পরে এ কথা সে তার বড় ভাবি রোজি আক্তারকে বলতে গেলে ওই ভাবি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে৷ পরে সাথী আক্তার সুকৌশলে ঘরের সিলিং থেকে বস্তাবন্দি তাসনুহার লাশটি সরিয়ে তার ঘরের পেছনে পুকুরে বস্তা বন্দি অবস্থায় ফেলে দেয়। পরে ওই পুকুর থেকেই বাড়ির লোকজন শিশু তাসনুহার লাশ উদ্ধার করে।
তাসনুহার বাবা রুবেল পাটওয়ারী বলেন, আমাদের একমাত্র আদরের মেয়ে তাসনুহা তাবাসসুমকে হারিয়ে কী করে থাকবো ভাই? আমি এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।
শাহরাস্তি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাসার জানান, শিশুটি বুধবার থেকে নিখোঁজ ছিল। পরিবারের সদস্যরা ডুবুরি দিয়ে পুকুরে অভিযান চালিয়েও শিশু তাসনুহা তাবাসসুমকে পাওয়া যায়নি।
ওসি আরও জানান, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আসামি সাথী আক্তারকে চাঁদপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে।
জেএইচ