ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৫ ভাদ্র ১৪৩২, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

সারাদেশ

বিক্রি করা জমি দখলে নিতে বেপরোয়া ভারত ফেরত প্রদীপ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:১০, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৫
বিক্রি করা জমি দখলে নিতে বেপরোয়া ভারত ফেরত প্রদীপ

খুলনা: সিকি শতাব্দী (২৫ বছর) আগে জমি জায়গা বিক্রি করে ভারতে স্থায়ী হয়েছিলেন খুলনার কয়রা উপজেলার আমাদী ইউনিয়নের ভান্ডারপোল মৌজার বেচপাড়া গ্রামের শীবনাথ মন্ডল ও কিরনী বালা। তাদের সন্তানেরাও একে একে থিতু হন পশ্চিবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে।

দু’দশক পরে তাদের এক সন্তান এলাকায় ফিরে মা-বাবার বিক্রি করা জমি গায়ের জোরে দখলে নিতে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করছেন। আর এই কাজে এক কালের নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থী সংগঠনের পরিচয় ব্যবহার করার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সংক্রান্ত নানা চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলে ধরেন মহানগরীর দেবেন বাবু রোড এলাকায় বসবাসরত ব্যবসায়ী মো: নোমান হোসেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ২০০০ সালে তার আম্মা তাসলিমা বেগম বেচপাড়া গ্রামের শীবনাথ মন্ডল ও কিরনী বালার কাছ থেকে পৃথক দুই দলিলে দুই দফায় ৫.৮৫ একর জমি ক্রয় করেন। একই সময়ে শীবনাথ মন্ডল ও কিরনী বালা তাদের সমুদয় জমি বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্রির পর স্বপরিবারে ভারতে চলে যান। তার মায়ের নামে জমির নামপত্তন, খাজনা পরিশোধ ও জমিতে ফসল উৎপাদন চলতে থাকে।

দুই দশক পর ২০২১ সালের দিকে শীবনাথ-কিরনি দম্পত্তির ছোট ছেলে প্রদীপ কুমার মন্ডল এলাকায় ফিরে স্থায়ীবসবাস শুরু করে। এরআগে কয়েকবার তিনি ভারতীয় পাসপোর্ট ব্যবহার করে আসা যাওয়া করেন। ভারতে তার স্থায়ী ঠিকানা ও আধার কার্ড রয়েছে বলে গ্রামবাসী অবগত। গ্রামে ফিরে প্রদীপ মন্ডল ও তার স্ত্রী লিপিকা মন্ডল সমাজের প্রভাবশালী গোষ্ঠীর সাথে যোগসাজশে তাদের মা-বাবার বিক্রি করে যাওয়া জমির অধিকাংশ দখল করে নেন। যার মধ্যে তাসলিমা বেগমের জমি ছাড়াও সিরাজ সরদার, খলিল সরদার, মিজানুর রহমান, আনিসুর রহমান, আনিস গাজীর জমি ছিল। এ নিয়ে গ্রামে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে অন্য সবার জমি ফেরৎ দিলেও তসলিমার ১৩ বিঘা ৫ কাঠা জমি দখল করে রাখে।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, শীবনাথ-কিরনী দম্পত্তির চার ছেলে ও দুই মেয়ে। অথচ ২০২১ সালে আমাদী ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যানের কাছ থেকে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে সংগ্রহ করা ওয়ারেশ কায়েম সনদে তিন পুত্র সন্তান দেখানো হয়। বাস্তবতা হলো এদের চার পুত্রের বড়জনের নাম বাবু। ১৯৯০ সালের দিকে তাকে রাতের আধারে ভারতে পাঠিয়ে দিয়ে স্থানীয় কয়েকজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে গুমের মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। বাবু বেঁচে আছেন এবং পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করছেন। দ্বিতীয় ছেলে রণজিত মন্ডলও ভারতে বসবাস করছেন। গত ডিসেম্বর মাসে রণজিত তার ভাইরার মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ঢাকায় আসেন। তাদের তৃতীয় পুত্র শংকর মন্ডল। নব্বইয়ের দশকে দক্ষিণবঙ্গের শীর্ষ সন্ত্রাসী পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক নেতা অসিম বৈরাগীর সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন শংকর। হড্ডায় ট্রিপল মার্ডার সহ অনেক সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও লুটপাটের সাথে জড়িত ছিল সে। পরবর্তীতে অসিম বৈরাগীর সাথে একই সময়ে আততায়ীর গুলিতে মারা যান।

ছোট ছেলে প্রদীপ কুমার মন্ডলের স্ত্রী লিপিকা চরমপন্থী নেতা অসিম বৈরাগীর মেয়ে। প্রদীপ হোড্ডে গ্রামের মুসাল হত্যা মামলার আসামী হিসেবে এক বছর কারাগারে ছিলেন। জামিনে বেরিয়ে তিনি ভারতে পাড়ি জমান। এবার দেশে ফেরার পর সাবেক চরমপন্থীদের সাথে তাদের পুনরায় সখ্যতা তৈরি হয়। সেই সাথে স্থানীয় সাবেক দুই ইউপি চেয়ারম্যান ও একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী তাকে সহযোগিতা করেছে। জমি উদ্ধারের চেষ্টা করায় খুলনা বিভাগীয় কমিশনার অফিসে চাকররিত তাসলিমার ছেলে মারুফকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে সম্মেলনে জানানো হয়।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে প্রদীপ কুমার মন্ডলকে কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ না করে কেটে দেন। আমাদী ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো: ইসমাইল হোসেন বাবলু ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, শীবনাথ বাবুরা তাদের সব জায়গা জমি বিক্রি করে ভারতে চলে গেছিলেন। দলিলে যতোটা জমি ছিল তার চেয়েও বেশি বিক্রি করেছিলেন বলে জেনেছি। প্রদীপ হঠাৎ করে ফিরে এসে জমি দাবি করছে। অন্য সবাই স্থানীয় হলেও তাসলিমার ওয়ারেশরা এলাকায় বসবাস না করায় পেরে উঠছে না। তিনি বলেন, প্রদীপরা এর আগে নিজেকে সংখ্যালঘু দাবি করে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছে। এখন আবার বিএনপি নেতাদের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যাচ্ছে। কাগজপত্রে কোথাও ফাঁক থাকায় এ সুবিধা পাচ্ছে বলে ধারণা করেন তিনি।

 

 

এমআরএম

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।