সান্তিয়াগো: দীর্ঘদিন এরকম অবরুদ্ধ থাকার সঙ্গে মারিও গোমেস বেশ ভালোই পরিচিত। তার পরিবার জানিয়েছে, একবার বিনাভাড়ায় জাহাজে চড়ে ডেকের নিচে ১১ দিন তিনি আটকে ছিলেন।
মারিও গোমেসের বয়স এখন ৬২। খনিতে আটকে পড়া ৩৩ জন শ্রমিকের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে প্রবীণ। সরকারি কর্মকর্তারা জানান, অন্য সহকর্মীদের কাছে তিনি আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করছেন। ভূগর্ভস্থ ওই পরিবারটাকে তিনিই সংগঠিত করেছেন। খনিশ্রমিকদের বিষণ্নতা ও ভয়ের ব্যাপারে কাজ করার জন্য মনোবিদদের সহকারী হিসেবেও কাজ করছেন।
অন্য শ্রমিকরাও শক্ত ধাতে গড়া। গোমেস ও আরও দুই জন খনি-ঐতিহ্যের পরিবার থেকে এসেছেন। তাদের সবার একসঙ্গে ৯০ বছরের বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে এ কাজে। পৃথিবীর পেটের মধ্যে চার মাস আটকে থাকার ব্যাপারে নিজেদের ও অন্যদের মানসিক শক্তি কিভাবে মজবুত রাখতে হয় তা শেখাচ্ছেন তারা।
গোমেস ছাড়াও ৫৪ বছর বয়ষী লুইস উরসুয়া রয়েছেন খনির ভেতরে। তিনি সবার জন্য কাজ নির্দিষ্ট করছেন। একইসঙ্গে উদ্ধারপথ তৈরির নির্দেশনা দিচ্ছেন।
মাটির নিচে রয়েছেন ৫০ বছর বয়সী ইয়োন্নি ব্যারিয়স। দলের উপস্থিত চিকিৎসক। ১৫ বছর আগে ছয় মাসের নার্সিং কোর্স সম্পন্ন করা ব্যারিয়স তার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাচ্ছেন। চার ইঞ্চি সরুপথের ভেতর দিয়ে পাঠানো ওষুধ সহকর্মীদের মধ্যে বিলি করছেন। একইসঙ্গে সবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় বর্ণনা পাঠাচ্ছেন ওপরে।
চিলির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. হাইমে মানালিচ বলেন, ‘তারা সম্পূর্ণ সংগঠিত। তাদের মধ্যে শৃঙ্খলাও বেশ শক্ত। এটাই তাদের জীবন ও মরণের অন্যতম বিষয়। ’
গত ৫ আগস্ট খনিধসের ঘটনার পর ওই ৩৩ জন শ্রমিক নিখোঁজ হয় বলে প্রথমে ভাবা হয়েছিলো। এর ১৭ দিন পর অলৌকিকভাবে চিলির প্রকৌশলীরা জীবিত ও অক্ষত অবস্থায় তাদের খোঁজ পায়। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৭০০ মিটার নিচে এখনো তারা আটকে রয়েছেন।
চিলির খনিমন্ত্রী লরেন্স গলবোর্ন জানাচ্ছেন, সব আশা নিঃশেষ হওয়ার পর একজন ড্রিল অপারেটর হঠাৎ একটু কম্পন অনুভব করেন। ১৫০ পাউন্ড ওজনের ড্রিলের হাতুড়ি ওপরে তোলার পর ওটার গায়ে লাল রং দেখা যায়। পরে দেখা গেল, এটার সঙ্গে একটি ব্যাগ বাঁধা রয়েছে। এর মধ্যে দুটি চিঠি। তিন পৃষ্ঠার একটি চিঠি গোমেসের স্ত্রীকে লেখা। আরেকটি চিঠিতে লাল রঙে লেখা রয়েছে, ‘আমরা ৩৩ জন এর মধ্যে ভালো আছি’
এর পর থেকে সরকারি কর্মকর্তারা খনিশ্রমিকদের সহায়তা করছেন। তবে তাদের উদ্ধার করতে আরও তিন বা চার মাস লাগবে।
আটকে পড়া শ্রমিকদের নিজেদের মুক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, তাদের তিন হাজার থেকে চার হাজার টন পাথর সরাতে হবে। উদ্ধার-পথ খোঁড়ার সময় এই পাথর সেখানে জমবে। এই কাজ ভাগাভাগি করে তাদের দিনে ২৪ ঘণ্টাই করতে হবে।
গত রোববার আত্মীয়-স্বজনরা তাদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। প্রত্যেকের জন্য এক মিনিট সময় বরাদ্দ ছিলো। এর একদিন আগে শ্রমিকদের চার-পাঁচ মিনিটের ভিডিও বার্তাও দেখানো হয় স্বজনদের।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, তারা শ্রমিকদের মানসিক অবস্থা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। শ্রমিকদের কেউ কেউ ভিডিও ফুটেজের সামনে আসতেই চাচ্ছিলেন না।
গত সোমবার থেকে উদ্ধার-পথ খোঁড়ার কাজ শুরু হয়েছে। ৩০ টনের ড্রিল মেশিন এতে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে সহায়তায় এগিয়ে এসেছে মহাকাশসংস্থা নাসা। নাসার একটি দল কোপিয়াপো শহরের পাশে স্যান হোসে স্বর্ণখনিতে বুধবার পৌঁছেছেন। সেখানে স্থানীয় প্রকৌশলীদের উদ্ধার কাজে নানা পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময়: ১২৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১০